এমনি একটি চেক পোস্টে তিন ঘণ্টা চিরুনি তল্লাশি চালিয়েও একটা মাতাল পর্যন্ত ধরতে পারলো না টহল-রত পুলিশ। ধৈর্যের বাঁধ ভাংতে লাগলো ইন্সপেক্টর সামির তার সহযোগী সাব ইন্সপেক্টর বিলাসের। কি ব্যাপার শহরের লোকজন কি মদ খাওয়াও ছেড়ে দিয়েছে নাকি? অথচ তাদের বাপ দাদারা একটা সময় সিআইডির হাবিলদার হয়েও ঘুষের টাকায় বাড়ি গাড়ি করে ফেলেছিলেন। আর তারা মশা মাছিও ধরতে পারছেনা।
এমনই হাঁসি ঠাট্টার সময় চেক পোস্টে আগমন ঘটে এক আগুন্তুকের। বাইকের কাগজ পত্র আগুন্তুকের এর সময় পরিচয় জানতে চাইলে জানালো সে কলেজ ছাত্র। সব ঠিক ঠাক থাকায় ছেড়েই দিচ্ছিল তাকে। কিন্তু তার চোখে মুখের চোরা চোরা রহস্য জনক ভাব চোখে পড়ে গেল সাব ইন্সপেক্টর বিলাসের। আর ঠিক তখনই তার পকেট থেকে বেরিয়ে আসে দামি মাউজার পিস্তল।
পকেটে আড়াইশ রুপি রাখার সামর্থহীন কলেজ ছাত্রের কাছে আড়াইশ লক্ষ টাকার অস্ত্র! ভাবতেই দুষ্টু বুদ্ধি খেলে গেল ইন্সপেক্টর সামিরের মনে। যাক এতক্ষণে বুঝি একটা শিকার পাওয়া গেল!
তাৎক্ষনিক জিজ্ঞাসাবাদ আর একটু কোশল খাটাতেই সে বলে বসলো শহরে ঘটা সিরিয়াল কিলিং গুলো সম্পর্কে তার কাছে তথ্য আছে। কিন্তু সে নির্দোশ তবে সহজে মুখ খুলতেও নারাজ। ইন্সপেক্টর সামির তখনি ফন্দি এটে নিল এ শিকার বড় কিছু হবেই হবে।
ধীরে ধীরে স্বীকারোক্তি দিতে শুরু করলো কলেজ ছাত্র আশিস। অদ্ভুত এক গল্প শোনালো সে। আর সেটি তদন্তে নেমেই হিমশিম খেয়ে গেল সাব ইন্সপেক্টর বিলাস।
আশিসের জবানবন্দি মতে, অনাথ আশ্রমে বড় হওয়া আশিস সাইকোলজির স্টুডেন্ট। থিসিস পেপারের জন্য এক সিরিয়াল কিলারের মনস্তাতবিক বিশ্লেষণ করতে গিয়ে তিন সহপাঠী সহ সেও জড়িয়ে পড়লো খুনের সাথে।
এইদিকে আটঘাট বেধে তদন্তে নামা বিলাস আশিসের কথার সত্যতা খুঁজতে ছুটে বেড়ায় অনাথ আশ্রম থেকে চার্চে। সেই চার্চের ফাদারের আপন ছোট ভাই-ই নাকি সেই সিরিয়াল কিলার।
মজার ব্যাপার হচ্ছে তদন্ত করতে গিয়ে এক পর্যায়ে বিলাস জানতে পারে ফাদারের ছোট ভাই অল্প বয়সেই মারা গেছে। তবে কি আশিস মিথ্যা গল্প সাজাচ্ছে? একই সাথে আশ্রমে খোঁজ নিতে গেলে সেখানের টিচার বিলাশকে থাপ্পড় মেরে বসে।
কী প্রশ্ন জাগছে মনে? কেনই বা থাপ্পড় মারলো বিকাশকে আর আশিস নির্দোশ হলে তার কথাই বা মিলছেনা কেন? নাকি সে নিজেই কোন গল্প বানাচ্ছে একের পর এক? কিন্তু সহজ সরল অশিস এত বড় গল্প বানাবে এটাও মানতে পারছে না বিলাশ।
এই দিকে বিলাশ টের পায় তার বস সামির গোবেচারা আশিসের মত শিকার পেয়ে খালি হাতে ছাড়ার পাত্র নয়। তাহলে কি ফন্দি আটছে সে নিরীহ আশিসকে নিয়ে? আর তার বাকি তিন সহপাঠীর কপালে এই নির্মম পরিহাস কেন? আর সেই সিরিয়াল কিলারের কাহিনীটাই বা কি?
এমনই সব রহস্যের জট বিলাসের সাথে সাথে আপনার খুলতে পারবেন টনি মুভিটির একদম শেষে। আর তার জন্য এক নিঃশ্বাসে দেখে ফেলতে হবে ২০১৯ সালে মুক্তি পাওয়া অসাধারণ এই মুভিটি।
উত্তেজনাপূর্ণ মুহুর্ত আর কাহিনীর ঘোর পেচে আটকে থাকবেন মুভিটির পুরো ২ ঘন্টা চার মিনিট। নিসন্দেহে মুভিটি থ্রিলার মুভি প্রেমীদের কাছে অনবদ্য হয়ে থাকবে। সে জন্যেই হয়তো IMDB রেটিং অনুসারে মুভিটি পেয়েছে ১০ এর মধ্যে ৮।
মজার ব্যাপার হচ্ছে মুভির কলা কোশলি সবাই প্রায় নতুন বললেই চলে। অভিনয়ের বিচারে কাউকে দেখে একদমই বিশ্বাস হয়না তারা অভিনয়ে কাঁচা। বরং তাদের নিখুঁত অভিনয়ের জন্য বেশ আলোচিত হয়েছেন মিড়িয়া গুলোতে।
পাশাপাশি মুভির গল্পটাও বেশ জমজমাট। রহস্য আর তার জটিলতা গুলো সত্যিই আসাধারণ। বিশেষ করে শেষের দিকের রহস্যটা জানার পরে আমার মত আপনারো মাথা ঘুরে যাবে এ ব্যাপারে নিশ্চয়তা দেয়া যায়।
এই প্রসঙ্গেই মুভি পরিচালক একই সাথে লেখক Vipul K. Rawal বলেছেন তিনি মুভিটিতে কোন রগ রগে যৌন সুড়সুড়ি দেওয়ার বিষয় রাখেননি। সেই সাথে মুভিটিতে নেই কোন গানও। তবুও পুরোটি সময় চরম এক উত্তেজনা নিয়েই শেষ করবেন মুভিটি।
যারা লক ডাউনে বসে ইউটিউবের আগাগোড়া দেখে শেষ করে ফেলেছেন। তারা অবশ্যই দেরি না করে মুভিটি দেখতে বসে যেতে পারেন এখনই।
৬০০ শব্দের এই লেখাটি লিখতে আমার যা যা ঘাটতে হয়েছে (তথ্যসূত্র)-
১। https://www.imdb.com/title/tt8017136/
২।https://timesofindia.indiatimes.com/entertainment/hindi/movie-reviews/tony/movie-review/72274112.cms
৩। https://in.bookmyshow.com/mumbai/movies/tony/ET00117872