[ছবিঃ নেট থেকে নেওয়া] 
কাঠবিড়ালী খুবই সাধারণ এবং নিরীহ প্রাণীর নাম। কিন্তু সাধারণ মানুষ এর উপকারের চাইতে অনিষ্টটাই বেশি দেখে। ডোরা কাটা দেখতে সুন্দর দেখতে পালতে ইচ্ছা করলেও গ্রামের মানুষ একে একদমই দেখতেই পারে না। কারণ এটি ফল মূল খেয়ে গ্রামের মানুষদের অপকারই বেশি করে।

এমনই একটি নিরীহ মানুষরূপী কাঠবিড়ালীর গল্প নিয়েই কাঠবিড়ালী সিনেমাটি। চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করেছেন নিয়ামুল হাসান মুক্তা এবং অসাধারণ এই গল্পটিও তার লেখা। 'চিলেকোঠা ফিল্মস' এর প্রযোজনায় মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্রটি বেশ আলোড়ন তুলেছেন সাধারণ দর্শক শ্রেণীর কাছে। একই সাথে প্রথম সিনেমা হিসেবে বেশ আলোচিত ও সমালোচিত হচ্ছেন পরিচালক নিজেও।

খুবই সাদা মাটা গ্রাম্য চরিত্র নির্ভর সিনেমা কাঠবিড়ালী। কিন্তু অসাধারণ এর গল্পটা। মূল চরিত্র হাসু (আসাদুজ্জামান আবীর) এবং কাজল (অর্চিতা স্পর্শিয়া)। শুরুতেই রহস্যজনক খুনের সিন দিয়ে শুরু হলেও ধীরে ধীরে এর মূল গল্পের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। গ্রামের পরোপকারী নায়ক হাসু। যার আত্মীয় স্বজন কেউ না থাকায় গ্রামের সবাইকেই তার পরিবারের মতই আপন করে নেয়। সেই সাথে আপন করে নেয় গ্রামের কিশোরী চরিত্রের কাজলকে। একমাত্র বন্ধু আনিসকে (সাইদ জামান শাওন) নিয়ে গল্পের কাহিনী আগাতে থাকে। সেই সাথে যুক্ত হয় গ্রামীণ প্রেম ভালোবাসা, পারিবারিক কলহ এবং ধীরে ধীরে মোড় নিতে থাকে মূল ঘটনার দিকে। 


সিনেমার প্রতিটি চরিত্রের নিখুঁত অভিনয় সিনেমাটির বিশেষ বিশিষ্ট। গ্রাম্য জীবনের সুখ হাসি কান্না এবং জৈবিক লোভ লালসা খুব সূক্ষ্ম ভাবে ফুটিয়ে তুলতে পেরেছেন পরিচালক নিয়ামুল হাসান মক্তা। পুরো সিনেমাটি শেষ করে অবাক হবেন যে এটিই পরিচালকের প্রথম সিনেমা।

পুরো সিনেমাটির গল্প, চরিত্র, সিনেমাটোগ্রাফি, গান এবং আবহ সংগীত বেশ ভালো ভাবেই সমাদৃত হয়েছে। দর্শক, মিডিয়া, কলাকুশলীদের কাছেও আলোচিত হয়েছে সিনেমাটি। একই সাথে সেন্সর বোর্ডের প্রশংসা পত্র পায় সিনেমাটি।



যে ৩টি কারণে মুভিটি আপনার বিশেষ ভালো লাগবেঃ

১। ট্রেইলার দেখে সিনেমাটিকে সাদা মাটা প্রেম কাহিনী ভেবে বসলে একদমই ভুল করবেন। সিনেমাটিতে প্রেম কাহিনীর পাশাপাশি রয়েছে রহস্য ও রোমাঞ্চকর উত্তেজনা।

২। খুবই সাদা মাটা গ্রাম্য পরিবেশটা এমন ভাবে ফটে উঠেছে মুভিটিতে সেটি গ্রাম প্রিয় যে কারোই ভালো লাগবে। বিশেষ করে ভিডিওগ্রাফি এবং ড্রোন থেকে নেওয়া প্রতিটি সিন অসাধারণ ছিল।

৩। সিনেমার শুরুতেই খুনের রহস্যের কুল কিনারা করতে এক নাগাড়ে শেষ করতে হবে আপনাকে।
[ছবিঃ নেট থেকে নেওয়া] 

যে ৫টি কারণে সিনেমাটি আপনার খারাপ লাগতে পারেঃ

১। নায়ক নায়িকার অবাধ প্রেম আর পাট ক্ষেতে যাওয়া দেখে কিছুটা হাস্যকর লাগতে পারে। তবে পরিচালক পাটক্ষেত যে ভাবেই উপস্থাপন করতে পেরেছেন সেটি দেখার মত।

২। অর্চিতা স্পর্শিয়া কোন দিক থেকেই গ্রাম্য মেয়ের সাথে যায় না। কিন্তু পুরো সিনেমাটিতে তার অভিনয় প্রশংসাযোগ্য।

৩। নায়ক নায়িকার প্রেম পিরিতি দেখে ভাবতেই পারেন তাদের গ্রামে আর কোন মানুষজন নেই। :p

৪। সিনেমার মাঝখানে নায়ক নায়িকার কোন বাঁধা ছাড়া হুট করে বিয়ে হয়ে যাওয়া আপনি নাও মানতে পারেন। 

৫। পরিচালকের প্রথম সিনেমা বলে সিনেমাটি ভালো হয়নি বলেও ধারণা করতে পারেন।

২০১৬ সালের সিনেমাটির কাহিনীর কাজ শুরু হলেও শুটিং শেষ করতে পরিচালকের লেগেছিল পাক্কা বছর। কারণ এর প্রতিটি দৃশ্যপট এবং বর্ষা এবং শীতের টাইমল্যাপস গুলো আলাদা আলাদা সিজনে ধারণ করা হয়। কৃত্রিম এবং ক্যামেরার কারসাজি খুবই কম ব্যবহার করার ফলে গ্রাম বাংলার নিজস্ব বইশিষ্ট খুবই নান্দনিক ভাবে ফুটে উঠেছে সিনেমাটিতে। এছাড়াও সিনেমাটির অর্থায়ন নিয়েও কিছুটা সমস্যার সম্মুখীন হয় পরিচালক। কিন্তু পুরো সিনেমাটি কলাকুশলী মিলেই সিনেমাটি বানিয়ে ফেলেন আর তার জন্য সে সময়ে নেন নি কোন পারিশ্রমিক।

২০১৯ সালের ২৭ ডিসেম্বর চলচ্চিত্রটির উদ্বোধনী হলেও, ২০২০ সালের ১৭ জানুয়ারি বাংলাদেশের ১৮ টি প্রেক্ষাগৃহে পুনরায় মুক্তি পায় সিনেমাটি। ব্যবসায় সফল এই মুভিটির পরিবেশনায় ছিল জাজ মাল্টিমিডিয়া

অসাধারণ উত্তেজনাপূর্ণ কাহিনীর এই সিনেমাটি আপনাকে বেশ ভালো একটা ধাক্কা দিতে সক্ষম হবে। ড্রামা জনরার সিনেমা হলেও এর থ্রিলার মিস্ট্রির জন্য আপনাকে মুভিটি দেখতেই হবে।


IMDB অনুসারে কাঠবিড়ালীর রেটিং- ৮.২


ব্যক্তিগত রেটিং- ৯.৫

৩টি মন্তব্য

  1. ভাই, ২০০১৬ পরিবর্তন করে ২০১৬ করুন। বানান ভুল হয়েছে!!!

    উত্তরমুছুন
  2. অসাধারণ!! আমি কি আপনার রিভিউ ব্যবহার করতে পারি??

    উত্তরমুছুন