মুভি রিভিউঃ সাঞ্জু (Sanju 2018)
সঞ্জয় দত্ত! ভারতীয় অভিনেতাদের মধ্যে অন্যতম ক্ষমতাধর অভিনেতা তিনি। তবে তার ক্ষমতা শুধু অভিনয়ে সীমাবদ্ধ নয়, আন্ডার ওয়ার্ল্ড পর্যন্ত বিস্তৃত। ব্যক্তিগত জীবন আর অভিনয় জগতে বহুল আলোচিত এই অভিনেতা। তার এই বহুল আলোচিত জীবনী নিয়েই রাজ কুমার হিরানীর বায়ো পিক মুভি সাঞ্জু।
সম্প্রতি রিলিজ হওয়া সাঞ্জু একের পর এক রেকর্ড ভেঙ্গে চলেছে। ভাঙ্গাটাই যেন স্বাভাবিক কারণ পরিচালক টাই এমন। মুন্না ভাই, থ্রি ইডিয়ট, পিকের মত মুভি বানিয়েছেন যিনি তার কাছে এসব নতুন কিছুই না।
মুভিটিতে দেখা যায় সঞ্জয় দত্ত, যার উপর বেশ কয়েকটি মামলার রায় পড়ে যাওয়ায় নিজেকে আত্মসমর্পণ করার জন্য মানসিক ভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কিন্তু তার আগে তিনি চাচ্ছিলেন যে তার জীবনের চড়াই উতরাই নিয়ে একটি বই লিখা হোক। যেন মানুষ তাকে ভুল না বুঝে সত্যি টা জনাতে পারে। কিন্তু তাকে নিয়ে লেখা প্রথম বইটিতে তাকে মহাত্মা গান্ধীর সাথে তুলনা করা হয় এতে রেগে গিয়ে তিনি বইটি পুড়িয়ে ফেলেন। যার কারণে তিনি অন্য এক লেখিকার কাছে ধরনা দেন। যিনি কিছুতেই রাজি নন তার মত এক "সন্ত্রাসী" ক্ষ্যত কোন লোকের জীবনী লিখে তার নিজের ক্যারিয়ার ধ্বংস করতে। তবে পুরু কাহিনী জানার পরে তিনিই অবশ্য অধীর আগ্রহে রাজি হয়েছিলেন সঞ্জয় দত্তের জীবনী লেখার জন্য। শুধু রাজি নয় বরং তিনি এমন কিছু জানতে পারলেন যে পরবর্তীতে নিজেই খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে সত্যি গুলো বের করে নেন।
এখানেই মজাটা।আমরা যারা মুভিটির কথা জানি, তারা এটাও জানি যে মুভিটিতে সঞ্জয় দত্তের জায়গায় অভিনয় করেছেন রণবীর কাপুর। কিন্তু মজাটা এখনেই যে, মুভিটি ফুটে উঠেছে রণবীর কাপুরের জবানীতে নয়, বরং সেই লেখিকার জবানীতে। রণবীর কাপুর শুধু মাত্র সঞ্জয় দত্তের জায়গায় ই অভিনয় করেছেন। অভিনেতা হিসেবে রণবীর কাপুর অবশ্যই অনেক ভালো অভিনেতা। তবে আমার মতে এখানে মনে হয়েছে রণবীর কাপুর ছাড়া অন্য কেউ এই চরিত্রটি এতটা নিখুঁত ভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারতেন না। মুভিটি দেখার সময় আপনাদের মনে হবে যে আপনারা রণবীর কাপুরকে নয় বরং সঞ্জয় দত্তকেই দেখছেন। এতটাই নিখুঁত আর সূক্ষ্ম ছিল তার অভিনয়।
তবে সবকিছু মিলিয়ে মুভিটি বেশ অসাধারণ ছিল। কারণ মুভিটিতে দেখা যায়, কিভাবে একটা সাধারণ মানুষ নেশার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ে। আর সে খান থেকে ফিরে আসার পরেও কি ধরনের সমস্যায় পড়তে পারেন। এমনকি আমরা যাদের প্রতিনিয়ত পর্দায় অভিনয় করতে দেখে মনে মনে আফসোস করি, তাদের জীবনটাও আসলে কতটা সাদামাটা এবং ঝামেলা পূর্ণ হতে পারে। মুভিটিতে আরও দেখা যায় যারা মিডিয়ার সাথে জড়িত বা পর্দায় পরিচিত মুখ, একটা নিউজ বা পত্রিকার হেডলাইন কতটা খারাপ প্রভাব ফেলে তাদের জীবনে।
যে সকল কারণে মুভিটি সমালোচিত বা আপনার খারাপ লাগতে পারে:
১। মুভিটিতে সঞ্জয় দত্তকে পুরোপুরিভাবে নির্দোষ এবং ক্লিন চরিত্রের ব্যক্তিত্ব হিসেবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
২। অনেকের মতে সঞ্জয় দত্তের মার্কেট ভ্যালু বাড়ানোর জন্যেই রাজ কুমার হীরানী তার বায়ো পিকটি রিলিজ করেছেন, কারণ মুন্না ভাই সিরিজের ৩য় মুভিটি খুব তাড়াতাড়ি তিনি করতে যাচ্ছেন। কারণ এই সিরিজের আগের ২ টি মুভিও তারই করা।
৩। ড্রাগের প্রতি আসক্তির মূল কারণ হিসেবে তার পারিপার্শ্বিক অবস্থা এবং সম্পূর্ণ দোষটি তার বন্ধুর ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে।
৪। তার ফ্যামিলির নিরাপত্তার কারণেই নাকি আন্ডার ওয়ার্ল্ডের সাথে তার সম্পর্কের কারণ । এখানেও যথারীতি তাকে নির্দোষ হিসেবেই দেখানো হয়েছে যদিও আন্ডার ওয়ার্ল্ডের সাথে তার সম্পর্কের যথেষ্ট প্রমাণ পুলিশের কাছেই ছিল।
৫। অস্ত্র মামলায় তাঁর কাছে এ কে ৫৬ বন্দুক রাখার তিনি নিজেই স্বীকার করে এক ইন্টার্ভিউতে বলেছিলেন যে তাঁর শিকার করার শখ ছিল, কিন্তু মুভিতে এই জিনিসটি সূক্ষ্ম ভাবে অন্য দিকে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
যে কারণে মুভিটি আপনার ভালো লাগতে পারে:
১। একজন অভিনেতা বা হাই প্রোফাইল মানুষ কিভাবে ড্রাগের দিকে আসক্ত হয়ে যেতে পারে এবং পরবর্তীতে সেখান থেকে ফিরে আসা এবং আসার পরেও কী ধরনের বিব্রতকর পরিস্থিতির স্বীকার হতে হয় তার সবই ফুটিয়ে তুলেছেন পরিচালক নিপুণ ভাবে।
২। পারিবারিক চাপ এবং নিজের ক্যারিয়ার পাশা পাশী পারিপার্শ্বিক অবস্থা কিভাবে একজন মানুষ কে ভুগাতে পারে সেই জিনিসটিও খুব সুন্দর ভাবে ফুটে উঠেছে।
৩। মিডিয়ার একটি নিউজ বা একটি হেডলাইন একটা মানুষের জীবনে কতটা মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে সেই জিনিটিও খুব সহজে উপলব্ধি করতে পারবেন।
৪। বাবার সাথে ছেলের সম্পর্কের যে দূরত্ব এবং তা কাটিয়ে উঠে পিতৃ সুলভ যে সাপোর্ট দেয়া উচিত সে জিনিটিও চমৎকার লেগেছে।
৫। একটি কাল্পনিক চরিত্র যতটা ভালো ভাবে নিজের মত করে ফুটিয়ে তোলা যায় বায়ো পিকে সঞ্জয় দত্তের মত গম্ভীর ব্যক্তিত্ব সম্পূর্ণ একটি চরিত্র হুবহু নকল করা বেশ জটিল ও কষ্ট সাধ্য ছিল যেটির জন্য রণবীর কাপুর অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার।
বায়োপিক মুভি কিছুটা বোরিং ধরণের হলেও রাজ কুমার হিরানী বেশ চমৎকার ভাবে মুভিটির শেষ পর্যন্ত উত্তেজনা বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছেন। আশা করি আপনাদেরও ভালো লাগবে।
IMDB অনুসারে রেটিং - ৮.৯
ব্যক্তিগত রেটিং- ৯/ ১০