পরিণীতা- ভালবাসা এবং প্রতিশোধ
আমি বরাবরই ভাল ভাল মুভি গুলো সবার শেষে দেখি। কেননা যখনই যেটার হাইপ উঠে সেটা নিয়ে লাগাতার পোস্ট চলতেই থাকে।
যেটা ভাল সেটা ভাল বলতে বলতে ফেনা তুলে ফেলে। আর একবার পচানি খাইলে সেটার তো কথাই নাই। ফেসবুকে মুভি গ্রুপ গুলাতে সেটা কচলানো লেবুর মত তিতা হয়ে ঝুলতে থাকে।
সেই অভ্যাস বসত গত বছরের পরিণীতা মুভিটি সার্ভারে আপলোড করা হয়েছি দেখেছি কিন্তু দেখার আগ্রহ বোধ করিনি।
ফ্রেন্ড লিস্টের দু একজন জোর ও করেছিল দেখার কিন্তু ঠিক ঠাক মুডটা পাচ্ছিলাম না। অই দুই তিনবার ট্রেইলার দেখেই ক্ষ্যান্ত দিয়েছি।
কিন্তু শেষ মেশ হুট করেই দেখতে বসে গেলাম। আর দেখার পর ভাল লাগাটা নিয়ে মুভি শেষ করেই রিভিউ লিখতে বসে গেলাম।
পরিণীতা মুভিতে যা দেখবেন
দুরন্তপনা কিশোরী বয়স আর বাড়ির পাশে ক্রাশ খাওয়া হুম টিউটার থাকলে যা হয় অই আরকি। এই নিয়েই ছিমছাম গল্পের পরিণীতা মুভিটি।
তবে মুভিটি ঠিক প্রেম কাহিনী নিয়ে নয়। এর ভেতরের মজাটা পাবনে মুভির একদম শেষের টুইস্টে। মুভির ঠিক মাঝ বরাবর আসতেই নায়ক "বাবাই দা" বলা নেই কওয়া নেই গলায় দড়ি লাগিয়ে ঝুলে পড়লো। মানে সুইসাইড আরকি।
তবে আমি যতটা সহজ ভাবে বলে ফেললাম সুইসাইড এর পেছনের কারণটাও কিন্তু এতটা সহজ ছিল না।
বাবাই-দা কে হারিয়ে কিশোরী মেহুল যেন এক লাফে অনেক বড় হয়ে যায়। এক দিকে সংসার অন্যদিকে হারানো প্রেমের শোক। অবশেষে সংসারের ঘানী টানতে মেহুলকে পা বাড়াতে হয় কর্পোরেট জগতের গ্লামারাস লাইফে। সেখানে ক্যারিয়ার সামনে এগিয়ে নিতে হলে বসের ছোঁয়া লাগেই। এখানেই বেড়া ছেড়া লাগিয়ে দেয় মেহুল।
তবে কি মেহুল বাবাই-দার কথা একদমই ভুলে যাবে? তবে কি এই প্রেম মিথ্যে ছিল? আর বাবাই-দা-ই বা কেন শুধু শুধু আত্মহত্যা করে বসলো মুভির ঠিক মাঝ বরাবর?
ছিম ছাম গল্পের এই সুইসাইডের রহস্যটা মুভির ঠিক শেষে বেরিয়ে আসবে। আর তখনি আলি বাবার চিচিং ফাঁক ( যা ভাবছেন তা নয় ) এর মত সব জল পানি হয়ে যাবে আপনার কাছে!
তার জন্যে পুরো এক ঢোকে মুভিটি গিলে ফেলত হবে আপনাকে। ভুলেও কিন্তু উঠা যাবে না মুভি পজ করে। সেই সাথে প্রতিটি দৃশ্যে মেহুলের পাগলামিটা অবশ্যই উপভোগ করবেন আপনি।
কেন দেখবেন পরিণীতা মুভিটি?
একটা কলেজ পড়ুয়া দুরন্তপনার কিশোরী মেয়ের ঠিক যতটুকু দুষ্টুমি আর ছন্ন ছাড়া হওয়া উচিত শুভ শ্রী যেন ঠিক ততটাই ছিল মুভিতে। মুভিটি দেখা শেষে আপনি একপ্রকার বাধ্যই হবেন এটা মানতে যে শুভ শ্রীর এটা একটা বেস্ট মুভি ছিল। চরিত্রের সাথে এর আগে এতটা মিশে যেতে খুব একটা চোখে পড়ে নি তাকে।
আর ঋত্বিক চক্রবর্তী ব্যাপারে কিছু বলার নেই। এই লোকটার প্যাশনেট অভিনয় যে কাউকেই মুগ্ধ করতে বাধ্য। তার কাজই তাকে চেনাতে বাধ্য করেছে। কিছুদিন আগে দেখা তার অভিনীত ভিঞ্চি দা সিনেমাতে তার ভিলেন চরিত্র ভুলার মত নয়। এছাড়াও তার কাজ করা প্রতিটি সিনেমাতে তার চরিত্র গুলো বেশ প্রশংসার দাবিদার। ২০১৩ সালে অপুর পাঁচালী সহ ব্যোমকেশ পর্ব এবং হর হর ব্যোমকেশেও অভিনয় করেছিলেন তিনি।
এছাড়াও মুভিটিতে রয়েছে মোট ৭ টি গান। যার মধ্যে শ্রেয়া ঘোষালের তোমাকে এবং অর্কের সেই তুমি গান দুটি এই মুভি হেটার্সদেরও ভাল লাগবে।
যাইহোক, ঘরে বসে থেকে আর এই রিভিউ পড়ে দু একবার ভেবে চিন্তে সময় নষ্ট করার আগেই দেখে ফেলতে পারেন মুভিটি। একবার মেহুল চরিত্রে ডুব দিতে পারলে পুরো মুভির ১ ঘণ্টা ৫৫ মিনিট খুব একটা খারাপ কাটবে না।
২০১৯ সালে মুক্তি প্রাপ্ত রোমান্টিক ধাঁচের মুভিটি পরিচালনা করেন রাজ চক্রবর্তী। আর পরিণীতার গল্পটি লিখেছেন অর্ণব ভৌমিক। তার আরও একটি ক্রাইম থ্রিলার “প্রতিদ্বন্দ্বী”আসছে ২০২১ সালে।
IMDB অনুসারে মুভির রেটিং ৭.৩। ব্যক্তিগত পছন্দ অনুসারে ৭.৫ বা আরেকটু আবেগ বসে ৮ দিয়ে দেওয়া যায়। তবে যারা দেখে ফেলেছেন তারা ব্যক্তিগত রেটিং জানাতে পারেন।