- গ্রাফটিং করার জন্য গ্রাফটিং নাইফ,
- গ্রাফটিং টেপ,
- পানি দেওয়ার দেওয়ার জন্য স্প্রে বোতল বা ওয়াটারিং জার,
- গাছের জন্য প্রয়োজনীয় সার
- গাছের পোকামাকড় রোধের অন্য প্রয়োজনীয় ঔষুধ বা কীটনাশক
|
বনসাই এর যন্ত্রপাতি - imtiazshoykat.blogspot.com |
উপরোক্ত সকল জিনিস পত্র একসাথে সংগ্রহ করা সত্যি অনেক সময় সাপেক্ষ এবং আপনার জন্য ব্যয়বহুল হয়ে যেতে পারে। কিন্তু একটু খেয়াল করলেই দেখবেন এসব জিনিসপত্রের সবকিছু কিন্তু আপনার একসাথে লাগবেনা আবার দেখবেন বেশির ভাগ জিনিস পত্রই সাধারন বাগান করার কাজে প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে একজন বাগানি হিসেবে আপনার কিছু কিছু জিনিস আগে থেকেই থাকার কথা। আর যে সকল জিনিস নেই সে গুলো খুব সহজেই কম খরচে সংগ্রহ করতে পারেন।
বনসাই যেহেতু কিছুটা সখ বা বিলাসিতার জিনিস সেক্ষেত্রে এর টুলস গুলোও কিছুটা বেশি দামের হয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে আপনি সখের বসে টুলস গুলো সংগ্রহ করতেই পারেন অথবা হাতের কাছে যা পান তাই দিয়েও কাজ চালাতে পারেন।বনসাই এর ভারি যন্ত্রপাতি গুলো বাংলাদেশে সবখানে পাওয়া যায় না তাই বনসাই শিল্পিরা সরাসরি চায়না থেকে এসব যন্ত্রপাতি সংগ্রহ করেন। তবে এখন আমাদের দেশের অনেক ই-কমার্স সাইট বা অনলাইন পেইজে এসব টুলস বিক্রি করে থাকে আপনি চাইলে তাদের থেকেও কিনে নিতে পারেন। বাইরে থেকে আনাতে গেলে দাম বেশিই পড়বে আর আমাদের দেশে ভারি কনকেইভ কাটার গুলো ২০০০-৩০০০টাকার মধ্যে হয়ে থাকে। মান এবং সাইজের উপর নির্ভর করে কম বেশ হতে পারে।
হাতের কাছের জিনিস পত্র দিয়েও আপনি আপনার দরকারি কাজ সেরে নিতে পারেন। যেমন- প্রুণিনহ সিজরের কাজ সাধারন ভালো মানের সিজর দিয়েই করতে পারেন। যে কোন স্টেশনারি দোকানে বা নার্সারিতে ৫০-১০০ টাকার মধ্যেই পেয়ে যাবেন। ওয়্যার বা প্লায়ার্স কাটার গুলো আপনার আসে পাশের হার্ডওয়্যারের দোকানেই পেয়ে যাবেন ১০০টাকার মধ্যে। তাছাড়াও কারওয়ান বাজারে দা-বটির মার্কেটে কিছু রেডিমেট বাগান করার যন্ত্রপাতি পেয়ে যাবেন। এছাড়াও আপনি চাইলে সেখান থেকে প্রয়োজনমত অর্ডার দিয়ে দরকারি টুলসটি বানিয়েও নিতে পারেন।
তবে, বনসাই মূলত একটি শৈল্পিক শিল্প। আর গাছের সঠিক সৌন্দর্যটি ধরে রাখতে সঠিক যন্ত্রটির কোন বিকল্প নেই।
এক্ষেত্রে উপযোগী যন্ত্রটি ব্যাবহারের মাধ্যেমেই আপনি আপনার গাছের সৌন্দর্য বজার রাখতে পারেন।
বনসাই গাছের জন্য মাটি
আপনার বনসাই গাছটি অন্য সাধারণ গাছের থেকে আলাদা আর তাই এর মাটিও সাধারন মাটি থেকেও আলাদা হয়ে থাকে। এর মাটি তৈরির ধাপটা আলাদা তবে সাধারন গাছের মাটি তৈরি থেকে খুব বেশি যে আলাদা তা কিন্তু নয়। বনসাই এর মাটি তৈরি পুরোটাই নির্ভর করে আপনার নির্বাচিত গাছটির উপর। শুরুর দিকে বনসাই ট্রেইনিং অবস্থায় থাকার সময় সাধারন টবে সাধারন মাটিতে প্রয়োজনীয় সার দিয়েও লাগিয়ে পরিচর্যা করতে পারেন কিন্তু বনসাই টবে ( ছোট অগভীর টব) লাগানোর সময় বনসাই মাটি ব্যাবহার করাই উত্তম। মাটি তৈরির সব সময়ই খেয়াল রাখতে হবে যে গাছের পানি যেন দ্রুত সরে যেতে পারে এবং গাছের শিকড় তাড়াতাড়ি বিস্তার করার জন্য টবের মাটি যেন কিছুটা ঝুর ঝুরে থাকে।
|
Potting Soil- imtiazshoykat.blogspot.com |
মাটি যেখান থেকে সংগ্রহ করতে পারেন-
যারা নিয়মিত বাগান করেন তাদের জন্য মাটি সংগ্রহ করা খুব একটা ঝামেলার কিছু না। কিন্তু যারা আমার মত শহরে থাকেন কিংবা বারান্দার বা অল্প জায়গা নিয়ে কাজ করছেন তাদের জন্য মাটি মিক্স করা বা সংগ্রহ করা অনেকটা ঝামেলার ব্যাপার। শুরুর দিকে আমিও অনেক ঝামেলা করে মাটি সংগ্রহ করেছি। কিন্তু এখন আপনি মাটির বিকল্প হিসেবে অনেক কিছু ব্যাবহার করতে পারেন। তাছাড়াঅনলাইন সাইট বা পেইজেও আপনার প্রয়োজনমত মাটি পেয়ে যেতে পারেন। এখন অনেক পেইজেই/সাইটে রেডি মিক্স মাটি পাওয়া যায়। যেখানে মাটি, সার সব কিছু মিক্স করা প্যাকেট আকারে পেতে পারেন। এ রেডিমিক্স মাটি টবে লাগিয়েই যে কোন গাছ লাগিয়ে দিতে পারেন।
|
Coco Peat- imtiazshoykat.blogspot.com |
কোকোপিট-
মাটির বিকল্প হিসেবে কোকোপিট (নারিকেলের ছোবড়ার গুঁড়ো) পাওয়া যায় নার্সারিতে যা দেখতে অনেকটা ইটের ব্লকের মত। মাটির সাথে কোকোপিট মিক্স করে লাগালে ভালো ফলাফল পাওয়া যায় কারন এতে মাটি ঝুরঝুরে হয়, পানি সহজে চলাচল করে যার ফলে গাছের শিকড় দ্রুত বিস্তার করতে পারে। মাটি সংগ্রহ করা আপনার জন্য ঝামেলার মনে হলে আপনি কোকোপিটে সরাসরিও গাছ লাগিয়ে দিতে পারেন। মাটির বিকল্প এ কোকোপিট আপনি বড়বড় নার্সারি কিংবা চাইলে ইউটিউবে দেখে বাড়িতেও বানিয়ে নিতে পারেন নারিকেলের খোসা/ছোবড়া দিয়ে। এছাড়াও এর দাম কিন্তু বেশি নয়। প্রতি ব্লক কোকো পিট ২৫ টাকা থেকে ৩০ টাকা হয়ে থাকে। কোকোপিট মিক্স বা কোকো ডাস্টের প্রতি কেজি ৩০ টকা থেকে শুরু। চাহিদা অনুযায়ী কম বেশি ও হতে পারে।
বনসাই গাছের প্রয়োজনীয় সার-
অনেকের মতে বনসাই গাছ মানেই ছোট রাখা বা বাড়তে না দেওয়া। যেটা পুরোপুরিই ভুল। বরং বনসাই গাছে অন্যান্য গাছের থেকে বেশি যত্ন নিতে হয়। আর এটি যেহেতু বনসাই টব(ছোট অগভীর পাত্র) বা ট্রেইনিং টব (সাধারন টব) এ থাকে সেক্ষেত্রে এতে নিয়মিত সার বা পুষ্টি সরবারাহ করা একান্তই প্রয়োজনীয় একটি জিনিস। টবে থাকার ফলে এটি মাটি থেকে দরকারি উপাদান নিতে পারেনা তাই প্রতি মাসে ১ থেকে ২ বার সার দিয়ে পুষ্টি সরবরাহ অব্যাহত রাখতে হয়। টবের গাছের জন্য সার প্রয়োগ অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
এক্ষেত্রে রাসায়নিক বা জৈব দুই ধরণের সার আপনি ব্যাবহার করতে পারেন। কিন্তু রাসায়নিক সারের ব্যাবহারের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবল্বন করতে হবে কেননা বেশি মাত্রায় প্রয়োগের ফলে আপনার সখের গাছটি মরেও যেতে পারে। আর কোন সার কেন দিতে হয় এবং কি পরিমানে দিতে হয় তা খেয়াল রাখতে হবে।
রাসায়নিক্ সার নার্সারি বা আসেপাশের কৃষি মার্কেট থেকে পেতে পারেন। পরিমান ভেদে এর দাম ১০ টাকা থেকে শুরু করে বেশি হতে পারে। কারন রাসায়নিক সার টবের গাছে খুবই অল্প পরিমানে দিতে হয়। বেশি প্রয়োগের ক্ষেত্রে গাছের উপকারের চাইতে অপকার ই বেশি হয়।
অপর দিকে বনসাই এ আপনি নিয়মিত ভাবে বাসায় বানানো জৈব সার ব্যাবহার করতে পারেন নিশ্চিন্তে। কেননা এটি ব্যাবহার করা নিরাপদ এবং খরচও নেই।কারন এটি যেহেতু জৈব সার সেক্ষেত্রে কম বেশি হলে গাছের তেমন ক্ষতি হয়ার আশঙ্কা নেই। বাসায় নিত্যদিনের শাক সবজির উচ্ছিষ্ট পচিয়ে বা কলার খোসা অথবা চা পাতা এগুলো অনেক ভালো জৈব সার হিসবে কাজ করে।
এছাড়াও আপনি চাইলে আপনার নিকটবর্তি নার্সারি থেকে ভার্মি কম্বোস্ট (কেঁচো সার), অথবা প্যাকেট জাত জৈব সার কিংবা গোবর সার, হাড়ের গুঁড়ো ইত্যাদিও কিনে মাসে একবার বা দুইবার নিয়মিত ব্যাবহার করতে পারেন। এসব প্যাকেট জার সারের দাম ৫০ টাকা থেকে ২০০ টাকার মধ্যে হয়ে থাকে।
বিঃ দ্রঃ শীত কালে ফুল গাছ ছাড়া সকল গাছে যে কোন সার প্রয়োগ করা থেকে বিরত থাকবেন। কারণ সময়ে এ বেশির ভাগ গাছের শিকড়ের কার্যক্রম খুব ধীরে হয় এবং গ্রোথ থেমে যায়।
বনসাই গাছের কীটনাশকঃ
অন্যান্য গাছের মত বনসাই গাছেও রোগ কিংবা পোকা মাকড় আক্রমন করে থাকে। ক্ষতিকারক পোকামকড়ের কারণে অনেক সময় গাছের পাতা বা ডাল মরে যেতে পারে কিংবা গাছের গ্রোথ থেমে যেতে পারে। এমনকি ক্ষেত্র বিশেষে রোগের কারণে সখের বনসাইটি মরেও যেতে পারে।
বনসাই গাছে পোকা আক্রমন করলে দ্রুত ব্যাবস্থা নিতে হবে। বেশির ভাগ গাছের কমন রোগ হচ্ছে ছত্রাকের আক্রমন এবং পোকার মধ্যে রয়েছে মিলিবাগ। আর মরে যাওয়া মিলি বাগের জন্য গাছে শুরু হয় পিপড়ার আক্রমন। এছাড়াও রয়েছে আরো অনেক ধরনের ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ। এর জন্য নিয়মিত হারবাল বালাই নাষক স্প্রে করতে হবে। প্রয়োজনে গাছে কীটনাশক প্রয়োগ করা লাগতে পারে।
গাছে কীট নাশক প্রয়োগের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। প্রয়োজন ভেদে কিটনাশক আপনার কাছাকাছি নার্সারিতে পেয়ে যাবেন অথবা ফেসবুকের অনলাইন পেইজ বা ওয়েব সাইট থেকেও অর্ডার করতে পারেন। পরিমান ভেদে এসব কিট নাশকের দাম ৫০ টাকা থেকে শুরু করে ১০০ টাকা বা আরো বেশিও হতে পারে।
অথবা আপনি চাইলে ঘরে বসে ইউটিব দেখে পাকৃতিক ভাবে ভেষজ পদ্ধতিতে পাকৃতিক বালাইনাশক বানিয়ে নিতে পারেন।
বনসাই গাছে প্রতি সাপ্তাহে গাছের সবকটি পাতা তুলা অথবা নরম কাপড় দিয়ে ধুঁয়ে দেওয়া ভালো। এতে পাতায় ধুলা বালি বা রোগের আক্রমন কম হয় এবং গাছের পাতা সুস্থ ও রোগমুক্ত থাকতে পারে। প্রয়োজন ভেদে এলোভেরা জেল পানির সাথে মিশিয়ে স্প্রে করতে পারেন। এলোভেরা পাকৃতিক এন্টিসেপটিক হিসেবে কাজ করে।
পরিশেষে- বনসাই অনেক শৌখিন একটি পেশা। বর্তমানে অনেকে সখের বসে কিংবা বানিজ্যিক ভাবেও অনেকে শুরু করেছেন। তাই এর সঠিক পরিচর্যা এবং তার জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ব্যাবহার একান্তুই গুরুত্বপূর্ণ। যা গাছের সৌন্দর্য বজায় রাখতে সহায়তা করে। মনে রাখা ভালো, প্রকৃতিতে যেভাবে একটি গাছ বেড়ে উঠে বনসাইকে সেভাবে আকৃতি দেওয়ার মাঝেই বনসাই এর সার্থকতা। অপাকৃতিক বা উদ্ভট আকৃতি গাছের শৈল্পিক সৌন্দর্য নষ্ট করে এবং একই সাথে শিল্পির কুরুচিপূর্ণ মনোভাবেরও বহিঃপ্রকাশ করে ।