image by imtiazshoykat.blogspot.com

১ 

ফেনীতে লাজ ফার্মার ৪৫ তম ব্রাঞ্চ খুলেছে বেশি দিন হয়নি। মনে মনে ভাবলাম এখানের স্থানীয় ফার্মাসি গুলোর সাথে সুবিধা করতে পারবে না। কারণ ছোট্ট শহরের পুরানো ফার্মাসিগুলোর সাথে মানুষের সখ্যতা অনেক দিনের। তাছাড়া এই শহরে মানুষদের সেবা প্রদান এই জিনিসটা বুঝানো বড় কঠিন। এইত সেদিন সব থেকে বড় ফার্মেসিটায় ওষুধ কিনতে কিনতে ভাবতেছিলাম আমার ধারণাই সঠিক।

মজার জিনিস হলো ফার্মেসি গুলো রাস্তার একদম পাশেই। আপনি প্রায় রিকশা থেকে বসেই কিনে ফেলতে পারবেন সব। সেদিন আমার সামনেই এক মহিলা সিএনজিতে বসেই হাসি হাসি মুখ করে ৩ জোড়া গ্লাভস কিনে নিয়ে গেল আত্মীয়ের বাড়িতে দাওয়াত খেতে যাবে বলে। অন্য দিকে লাজ ফার্মায় মাস্ক গ্লাভস ঠিক মত পরে হ্যান্ড স্যানিটাইজ সেই সাথে তাপমাত্রা মেপে ঢুকতে হয়। এত্ত ঝামেলা কে করে!

সেদিন ওডমস কিনতে গিয়ে কোথাও না পেয়ে লাজ ফার্মায় ঢুকেই তো চোখ ছানা বড়া! ভেতরে শপিং শপিং একটা আমেজ। সব থেকে মজার কথা ওষুধ কেনার চাইতে ক্রেতাদের লাজ ফার্মার কসমেটিক্স/বেবী প্রোডাক্টের কর্ণারে বেশি ভিড়।

ওডোমসের খোঁজ করতেই একজন বলল আছে বলেই ভেতরে চলে গেল। কিছুটা দেরি হচ্ছে দেখে আরেক জনকে জিজ্ঞেস করতেই বলল বোধ হয় নাই! মনে মনে ধরেই নিলাম এই হচ্ছে অবস্থা! কিছুটা নিরাশ হয়েই বেরিয়ে পাশের দোকানে চলে এলাম। কিছুক্ষন পরেই এক ছেলে দৌঁড়ে দৌঁড়ে এল, "স্যার আপনার ওডোমস পাওয়া গেছে!"

আমার মতে এই ছেলেকে মাসের সেরা সেলসম্যান নির্বাচিত করা উচিত। অন ডিউটিতে স্টোর ছেড়ে দৌড়ে এসেছিল মাত্র ১ টি ওডোমস বিক্রি করতে৷

২ 

বেশ কয়েক দিন ধরে আমাদের পাড়াতে লক ডাউন চলছে। লকডাউন মানে একদম লকডাউন। একটু পর পর বাশ আর গলির মাথায় একদম বাশ লাগিয়ে পুরা বন্ধ! রিকশা সাইকেল তো না ই মানুষ ও বের হতে কষ্ট হয়। তার পরেও নিত্য প্রোয়োজনীয় জিনিস কিনতে সাপ্তাহে একবার হলেও বের হতে হয়। আর যাদের বাসায় অসুস্থ রোগী আছে তাদের তো কথাই নাইর

ওষুধের দোকান ছাড়া সব বন্ধ। এমনকি মুদি দোকান গুলাও সাপ্তাহে দুই দিন খোলা রাখার অনুমতি আছে। এমনি এক সাপ্তাহিক খোলার দিনে এলাকার মুদি দোকানে গিয়ে দেখলাম দোকানদার খুবই ব্যস্ত। খেয়াল করে দেখলাম তিনি সব চাল ডালের প্যাকেট তৈরি করছেন। জিজ্ঞেস করে জানতে পারলাম মূল ঘটনা।

যেহেতু দোকান বন্ধই থাকে উনি অন্যান্য দিন গুলোতে ঘরে বসে পাড়ার যত জনকে চিনেন প্রায় সবাইকে ফোন করে কার কি লাগবে জেনে সবার জন্য আলাদা লিস্ট করে রেখেছেন। আর আজকে উনি আর উনার ছেলে মিলে সেগুলো যার যার বাসায় পৌঁছে দিবেন।


যেখানে পাড়ার অন্য মুদি দোকান গুলোতে দুই দিন খোলা রেখে বেচা বিক্রি স্বাভাবিকের মতই। সেখানে উনার ২ দিনে সাপ্তাহের সব দিনের থেকেও বেশি বিক্রি হয়ে গেল।

ইনশা আল্লাহ, এই সাপ্তাহে এই পাড়ার সবাইকে ঠিক ভাবে দিতে পারলে, পরের সাপ্তাহে পাশের পাড়াতেও ফোন দেওয়ার চেষ্টা করবেন।

৩ 

লকডাউনের মধ্যে শুধুমাত্র ফার্মেসি ছাড়া অন্য সব কিছুই বন্ধ! কিন্তু সবজি বা চাল ডাল হুট করে শেষ হয়ে গেলেও তো বের হওয়া লাগে। আমি তো ভয় পেয়েগেছিলাম যে ফার্মেসি গুলোই না শেষ মেশ ওষুধের পাশাপাশি চাল ডাল বেচা শুরু করে! এর আগের লক ডাউনে শুনেছিলাম অনেক দোকানেই শাটার নামিয়ে ভেতর থেকে গায়েবী বাজার সদাই করেছেন।

সঠিক জায়গায় ঠিক জিনিসটা না থাকলে ক্রেতাদের ভোগান্তিটাই বাড়ে। এমনটাই মনে হচ্ছিল যে লকডাউনের মধ্যে খুব দরকারি জিনিস গুলো কিনতে কতটা ঝামেলা করে এলাকা থেকে বের হওয়া লাগে। সেখান থেকেই ভাবছিলাম যদি প্রতিটা লকডাউন করা গলির  মাথায় যদি দরকারি জিনিস পত্র গুলো এনে রাখতে তাইলে কিছুটা ভোগান্তি কমতো।

দুই দিন পরেই দেখলাম গলির মাথায় কিছু ফল আর ওয়ালা সবজিওয়ালা এসে বসেছে। ফলে যারা লকডাউন জোনের ভেতরে পড়েছে তারা জোনের ভেতরে থেকেই কিনতে পারছে সব কিছু। আবার জায়গা ধরে বসে থেকে সবজি বিক্রেতাদের থেকে যারা বুঝতে পেরে দোকান সরিয়ে এনেছে তাদের ও প্রতিদিনের সবজি প্রতিদিন বিক্রি হয়ে যাচ্ছে আরামসে।

গ্রোথ হ্যাক জিনিসটা আসলে তেমন জটিল কিছু না। আপনাকে শুধু মাত্র আপনার আশে পাশে ভালভাবে নজর রাখতে হবে। ছোট্ট কোন আইডিয়াও হয়ে উঠতে পারে আপনার গ্রোথ হ্যাকিং এর শুরু।

No comments